তাওয়াফ করার নিয়ম: সহজ ব্যাখ্যা

Blog Details
তাওয়াফ করার নিয়ম: সহজ ব্যাখ্যা

 তাওয়াফ হলো পবিত্র কাবা শরিফের চারপাশে নির্দিষ্ট নিয়মে সাতবার ঘুরে ইবাদত করা। এটি উমরাহর অন্যতম প্রধান অংশ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। তাওয়াফ করার সময় শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে একাগ্রতা বজায় রাখা জরুরি। এখানে ধাপে ধাপে তাওয়াফ করার নিয়ম সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হলো, যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারেন।

 

তাওয়াফ করার প্রস্তুতি

তাওয়াফ শুরু করার আগে কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়:

ওযু করা (ওযু ছাড়া তাওয়াফ শুদ্ধ হয় না)

ইহরামের কাপড় ঠিক করে নেওয়া

তাওয়াফের নিয়ত করা

হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) চুম্বন বা ইশারা করার জন্য প্রস্তুত হওয়া


📖 হাদিস:
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "তাওয়াফ, নামাজের মতোই একটি ইবাদত, তবে এতে কথা বলা জায়েজ, তবে শুধু ভালো কথা বলবে।" (তিরমিজি: ৯৬০)

 

তাওয়াফ করার ধাপসমূহ

১. হাজরে আসওয়াদে গিয়ে তাওয়াফ শুরু করা

  • কাবার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়ান।
  • "বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার" বলে ডান হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করুন বা চুম্বন করুন।
  • ভিড় থাকলে দূর থেকে ডান হাত তুলে ইশারা (ইস্তিলাম) করুন এবং আল্লাহু আকবার বলুন।

📖 হাদিস:
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা গুনাহ মোচন করে।" (তিরমিজি: ৯৫৯)

 

২. কাবার চারপাশে ৭ বার প্রদক্ষিণ করা (তাওয়াফ সম্পন্ন করা)

  • কাবা বাম পাশে রেখে ঘড়ির উল্টো দিকে ধীরে ধীরে হাঁটুন।
  • হাজরে আসওয়াদে পৌঁছালে প্রত্যেক চক্করে হাত তুলে ইস্তিলাম করুন।
  • প্রথম তিন চক্করে পুরুষদের জন্য রমল (সামান্য দ্রুত হাঁটা) সুন্নাত।
  • বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে হাঁটতে হয়।

 

৩. তাওয়াফের সময় দোয়া ও জিকির

  • তাওয়াফের সময় যেকোনো দোয়া, কোরআনের আয়াত বা আল্লাহর জিকির পড়া যায়।
  • "রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান নার"
  • সাঈদ ইবন জুবায়ের (রহ.) বলেন, "তাওয়াফের সময় যেকোনো ভালো দোয়া পড়া যায়।" (সহিহ মুসলিম: ১৩৫৫)

 

৪. রুকনে ইয়ামানিতে হাত বুলানো (সুন্নাত)

  • কাবার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত "রুকনে ইয়ামানি" স্পর্শ করা সুন্নাত।
  • তবে চুম্বন বা ইশারা করার প্রয়োজন নেই।

📖 হাদিস:
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করলে গুনাহ মাফ হয়।" (তিরমিজি: ৯৬২)

 

৫. সপ্তম চক্কর শেষে মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ পড়া

  • তাওয়াফ শেষ হলে মাকামে ইব্রাহিমের সামনে গিয়ে ২ রাকাত নামাজ পড়া সুন্নাত।
  • প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া উত্তম।
  • ভিড় থাকলে মসজিদের অন্য কোনো স্থানে নামাজ পড়া যায়।

📖 কোরআনে বলা হয়েছে:
"আর তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে নামাজের স্থান বানাও।" (সূরা বাকারা: ১২৫)

 

৬. জমজম কুয়ার পানি পান করা

  • জমজম কুয়ার পানি পান করা ও গায়ে লাগানো সুন্নাত।
  • পান করার সময় এই দোয়া পড়তে পারেন:
    اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا وَاسِعًا وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
    (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক ও সব রোগ থেকে সুস্থতা কামনা করছি।)

📖 হাদিস:
রাসূলুল্লাহ
বলেছেন, "জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয়, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়।" (ইবনে মাজাহ: ৩০৬২)

 

তাওয়াফ সংক্রান্ত কিছু জরুরি তথ্য


১। তাওয়াফের সময় নামাজের আজান দিলে কি করতে হবে?
আজান শোনা মাত্র তাওয়াফ বন্ধ করে নামাজ আদায় করতে হবে, তারপর আবার তাওয়াফ চালিয়ে যেতে হবে।


২। তাওয়াফের সময় যদি ওযু ভেঙে যায়?

নতুন করে ওযু করে তাওয়াফ আবার শুরু করতে হবে।


৩। তাওয়াফের সময় কথা বলা যাবে কি?

হ্যাঁ, তবে শুধু ভালো কথা বলা বা ইসলামি আলোচনা করা যাবে।


৪। মহিলাদের জন্য বিশেষ কোনো বিধান আছে?

মহিলারা বোরকা ও হিজাব পরে তাওয়াফ করবেন, তবে মুখ ঢেকে রাখা নিষেধ।


৫। তাওয়াফ অসম্পূর্ণ থাকলে কি করতে হবে?

যদি কোনো কারণে তাওয়াফ অসম্পূর্ণ থাকে, তবে পরে বাকি চক্কর সম্পন্ন করতে হবে।

 

তাওয়াফ হলো উমরাহ ও হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সঠিকভাবে পালন করা জরুরি। আল্লাহর ঘর কাবার চারপাশে ঘুরে তাঁকে স্মরণ করা মুসলমানদের জন্য এক বিশাল নেয়ামত।

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, "তাওয়াফকারী ব্যক্তি আল্লাহর অতিথি।" (ইবনে মাজাহ: ২৮৮৩)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে তাওয়াফ করার তাওফিক দান করুন—আমিন! 🤲

 

 


Share
Comments
কমেন্ট করতে লগইন করুন। লগইন | রেজিস্ট্রেশন

No Data Found