হজ হল ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত, যেখানে সামর্থ্যবান মুসলমানরা হিজরি বছরের জ্বিলহজ্জ মাসে কাবা শরিফসহ মক্কার নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে নির্ধারিত নিয়মে ইবাদত করে।হজের প্রথম ও প্রধান শর্ত দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া।সামর্থবান বলতে দৈনন্দিন খরচ বাদে হজ্বে আবশ্যকীয় প্রয়োজনে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তথা যাওয়া আসা, সেখানে থাকা খাওয়া ইত্যাদি পরিমাণ টাকা থাকলে ব্যক্তির উপর হজ্ব করা ফরজ হয়ে থাকে।
সে হিসেবে দেখতে হবে বর্তমানে হজ্ব করতে গেলে কত টাকা লাগবে। সে টাকা উক্ত ব্যক্তির কাছে থাকলে তার উপর হজ্ব করা আবশ্যক।অনেকের জীবনে হজ্জ একমাত্র স্বপ্নের মতো। চলুন জেনে নেয়া যাক হজ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এই একটি লেখায়।
হজ্জে যাওয়ার নিয়ত করে ফেললে সেক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে আবেদন করে ফেলা ।যদি সঠিক সময়ে আবেদন না করা হয় তাহলে শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও সঠিক সময় হজ্জে যাওা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে হজ্জে যাওয়ার আবেদন সাধারণত প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে করা যায়। তবে আরবি মাস অনুযায়ি সময়টা পরিবর্তনশীল, তাই সরকারের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট চোখে রাখতে হয়।
বাংলাদেশ থেকে হজে আবেদনের ক্ষেত্রে, আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। এছাড়াও আরো কিছু উল্লেখিত নিয়মাবলী রয়েছে
উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ সাপেক্ষেই একজন মুসলিম হজ পালনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাই হজের ইচ্ছা থাকলে এসব শর্ত ভালোভাবে জেনে এবং মান্য করে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
প্রাক নিবন্ধন করতে যে সকল তথ্য প্রয়োজন:
প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ১৮ বছরের উর্ধ্বের হজযাত্রীর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট, ১৮ বছরের নীচের বয়সীদের জন্মনিবন্ধন/পাসপোর্ট এবং বিদেশে বসবাসরত (নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি) হজযাত্রীর জন্য জন্মনিবন্ধন/পাসপোর্ট, ওয়ার্ক পারমিট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এসব তথ্য অনুযায়ী প্রাক আবেদন করতে হবে।
সরকারি মাধ্যমে প্রাক নিবন্ধন / নিবন্ধনে সহায়তা কেন্দ্র:
সরকারি মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রাক-নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সেন্টার যথাঃ ডিসি অফিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র ও পরিচালক, ঢাকা হজ অফিস। তবে, সরাসরি নিজেই সরকারি মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধন / নিবন্ধন করা যায়
বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য হজে অংশ নিতে হলে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন ও নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হয়। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী অনলাইন হজ পোর্টাল এবং নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ জমা দিয়ে হজ নিবন্ধন করতে হয়।
নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
ধাপসমূহ অনুসরণ করে সঠিকভাবে আবেদন সম্পন্ন করলেই হজের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হজযাত্রার প্রস্তুতির প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই সময়মতো সব কাজ শেষ করা অত্যন্ত জরুরি
বাংলাদেশের সহ প্রতিটা দেশের জন্য সৈদি সরকার হজের কোটা নির্ধারন করে দেইয়। এর কারন নিরাপদে এবং নিয়ন্ত্রিত ভাবে সহজে হজ পালন করা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি দুই ভাবেই হজ করা যায়।
বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর সুশৃঙ্খলভাবে হজ পরিচালিত হয়। সঠিক সময় ও নিয়ম মেনে আবেদন করাই হজে অংশগ্রহণের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক হজযাত্রীকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঠায়। আবেদনকারীরা www.hajj.gov.bd পোর্টালে আবেদন করেন।
আবেদন বাতিলের কারণ জেনে নেওয়া:
প্রথমেই জানা গুরুত্বপূর্ণ, কেন আবেদনটি বাতিল হয়েছে। সাধারণত বাতিলের কারণ হতে পারে:
বাতিলের কারণ এসএমএস/ই-মেইল/অনলাইন হজ পোর্টালে জানানো হয়ে থাকে। বাতিলের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সাহায্য পেতে স্থানীয় জেলা হজ অফিস, ধর্ম মন্ত্রণালয়, অথবা হজ হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
যদি আবেদন বাতিল হয়, এবং আপনি টাকা জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে রিফান্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত রিফান্ড ফরম পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (পাসপোর্ট, ব্যাংকের রসিদ, আবেদন বাতিলের প্রমাণ ইত্যাদি) সংযুক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে বা অনলাইনে রিফান্ড আবেদন জমা দিতে হবে ।
সাধারণত আবেদন যাচাইয়ের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
পরবর্তী বছরে আবেদন করার প্রস্তুতি নেওয়া:
যদি এবার যাওয়া না হয়, তবে আগামী বছর সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সময়মতো আবেদন করতে হবে। আগের সমস্যাগুলো যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
বেসরকারি মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধন সনদ এবং পাসপোর্ট প্রয়োজন। আপনি প্রাক নিবন্ধন সনদে বর্ণিত ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে হজ পোর্টালের পিলগ্রিম সার্চ অপশনের মাধ্যমে নিবন্ধনযোগ্য কিনা তা যাচাই করতে পারবেন।।
নিবন্ধন ২ টি পর্যায়ে হবে। প্রথমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রাথমিক নিবন্ধন (বিস্তারিত জানতে ২০২৫ সনের প্রাথমিক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি দেখুন) এবং পরবর্তীতে হজ প্যাকেজ ঘোষণা হলে অবশিষ্ট টাকা জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে।
বাংলাদেশে অনেকেই বেসরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হজে যান। এটি তুলনামূলকভাবে নমনীয় এবং ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজের সুযোগ থাকে। সবসময় এজেন্সির সঙ্গে লিখিত চুক্তি করুন এবং জমাকৃত অর্থের রশিদ অবশ্যই সংগ্রহ করুন।
উল্লেখিত প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করার মাধ্যমে অনুমোদিত এজেন্সির সহায়তায় হজের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ করা যায়। তাই নির্ভরযোগ্য এজেন্সি নির্বাচন করে সময়মতো প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করাই হজযাত্রার প্রস্তুতির মূল চাবিকাঠি।
কোটার নাম | ব্যাখ্যা |
সাধারণ কোটা | অধিকাংশ আবেদনকারী এই কোটায় পড়ে |
মুক্তিযোদ্ধা কোটা | বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত |
নারী ও মাহরাম ছাড়া নারী কোটা | নির্ধারিত বয়সের ওপর নারী যারা মাহরাম ছাড়া হজ করতে চান (সৌদি সরকারের অনুমতি অনুযায়ী) |
প্রথমবার আবেদনকারী কোটা | যারা আগে কখনও হজে যাননি তাদের অগ্রাধিকার |
বয়সভিত্তিক অগ্রাধিকার | সাধারণত প্রবীণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় |
হজে যেতে হলে নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা আবশ্যক। এই ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে জমা না দিলে নিবন্ধন বা ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা হতে পারে।
উপরোক্ত সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত ও সময়মতো জমা দেওয়াই হজের সফল নিবন্ধনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ নথিপত্র থাকা নিশ্চিত করলে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত ও ঝকঝকে সম্পন্ন হয়, যা হজযাত্রাকে আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে।
অনেক সময় নিয়ম-কানুন বই পড়ে যতটা বোঝা যায় না, বাস্তব অভিজ্ঞতা শুনলে অনেক ক্লিয়ার হয়ে যায়।যখন কেউ নিজের জিবন থেকে গল্প শোনায় কীভাবে ফরম পূরণ করেছেন, কী কী অসুবিধা হয়েছিল, কেমন করে সমস্যার সমাধান করেছেন । তখন মনে হয়, এই যাত্রাটা আমাদের জন্যই।।
হজ্জের সময় শারীরিক পরিশ্রম অনেক বেশি হয়। তাই আগে থেকেই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, হাঁটা-চলার সক্ষমতা এসব চেক করিয়ে নিন। যদি কোনো অসুস্থতা থাকে, তাহলে সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নিন।।
সরকার এবং ইসলামিক সংস্থাগুলো এখন হজ্জ গাইড অ্যাপ তৈরি করেছে, যেখানে মানসিক প্রস্তুতি, করণীয়, দোয়া সব দেওয়া আছে। আজকের ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি আমাদের অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে দিয়েছে। হজ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাটাকেও এখন সহজতর করতে নানা সরকারি ও ইসলামিক সংস্থা বিশেষ ‘হজ্জ গাইড অ্যাপ’ তৈরি করেছে।
এই অ্যাপে শুধু নিয়ম-কানুন বা করণীয় লেখা নেই, বরং মানসিক প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় দোয়া, পথ নির্দেশনা, হজ্জের বিভিন্ন রুক্ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং প্রার্থনার সময়সূচিও পাওয়া যায়।
হজ্জের সময় প্রায় ৪০ দিন বাইরে থাকতে হয়। বয়স্ক বাবা-মা, ছোট সন্তান থাকলে আগে থেকেই কে দেখাশোনা করবে সেটা নিশ্চিত করুন।
আবেদন করলে একটি Tracking ID পাওয়া যায়। এই আইডি দিয়ে আপনি অনলাইনে আবেদন স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন:
পাসপোর্ট প্রস্তুত , আবেদন সময় জানুন , স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান , হজ্জ গাইড অ্যাপ ডাউনলোড , কোর্সে অংশগ্রহণ , আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর ঠিক রেখে যান , প্রতিদিন একটু করে হজ্জের দোয়া পড়ুন।
🌺 শেষ কথা
হজ্জ মানে শুধু যাওয়ার ইচ্ছা নয়, এটি প্রস্তুতির একটি নাম। রফিক কাকার মতো আরও অনেকেই আছেন যারা বছরের পর বছর অপেক্ষা করেন। আপনি বা আপনার প্রিয়জন যদি হজ্জে যেতে চান, তবে সময় থাকতেই শুরু করে দিন প্রস্তুতি। এই লেখাটি আপনার পথচলার এক সহযাত্রী হোক।
আল্লাহ আপনাদের হজ্জ কবুল করুন। আমিন।