ইসলামের ইতিহাসে সর্বাধিক পবিত্র স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ও অনন্য স্থান হলো মসজিদে নববী। এটি কেবল একটি নামাজ আদায়ের স্থান নয়; বরং এটি ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষ্য, নবুয়তের আলোয় উদ্ভাসিত সেই পুণ্যভূমি যেখানে মানবতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করেছেন। মসজিদে নববী সেই মহামসজিদ যেখানে বসেই রাসূল (সা.) ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি স্থাপন করেছেন, শিক্ষা ও দাওয়াতের মহান কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, সাহাবীদের শিক্ষিত করে মানবতার মুক্তির দূত তৈরি করেছেন।
এই মসজিদে নববীতে শায়িত রয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যার কারণে এই মসজিদের মর্যাদা বহুগুণ বেড়ে যায়। তাঁর রওজা মোবারক (পবিত্র কবর) এই মসজিদের সীমানার মধ্যেই অবস্থিত যা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে এক গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আবেগের উৎস।
প্রতি বছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান মদিনা মুনাওয়ারায় এসে মসজিদে নববী জিয়ারতের মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তি লাভের চেষ্টা করেন। অনেকের জীবনের দীর্ঘ সাধনা ও দোয়ার ফসল হয় এই পবিত্র ভূমিতে পা রাখা। কারণ, মসজিদে নববী জিয়ারতের মাধ্যমে একজন মুসলিম শুধু ইবাদতের ফজিলতই অর্জন করেন না, বরং তাঁর হৃদয়ে রাসূলের প্রতি গভীর মহব্বত ও অনুসরণ করার আকাঙ্ক্ষাও জাগ্রত হয়।
মসজিদে নববী জিয়ারতের রয়েছে বহু ফজিলত, যা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একইসঙ্গে, সেখানে জিয়ারতের কিছু আদব ও নিয়ম রয়েছে যা মুমিন মুসলমানদের মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এই আদবগুলো জিয়ারতের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক প্রভাবকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
এই নিবন্ধে আমরা মসজিদে নববীর ইসলামী গুরুত্ব, ফজিলত, জিয়ারতের সুন্নতপন্থী নিয়ম ও আদবসমূহ নিয়ে আলোচনা করব, যেন প্রত্যেক পাঠক এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন এবং ভবিষ্যতে মসজিদে নববী জিয়ারতের সুযোগ পেলে সঠিকভাবে তা পালন করতে পারেন।
মসজিদে নববী ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য নিদর্শন। এটি মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থিত, যেখানে হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেন। দ্বিতীয় হিজরিতে নবীজী (সা.) সাহাবাদের সহযোগিতায় নিজ হাতে এই পবিত্র মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি নিজেও ইট বহন করেছেন, খেজুর গাছের গুঁড়ি বসিয়েছেন এবং মাটিতে নিজ হাতে কাজ করেছেন। এটি ছিল তাঁর বিনয়, নেতৃত্বের প্রকৃত দৃষ্টান্ত এবং উম্মাহর প্রতি গভীর দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ।
প্রথম দিকে মসজিদের কাঠামো ছিল অত্যন্ত সরল ও সাধারণ। দেয়াল ছিল কাঁচা ইটের, ছাদ ছিল খেজুর পাতার ছাউনি, আর খেজুর গাছের গুঁড়ি ছিল খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত। মেঝেতে ছিল শুধু মাটি, যা বৃষ্টির দিনে কাদা হয়ে যেত। তথাপি এই সরল নির্মাণশৈলীর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল এক মহত্তম বার্তা ইবাদত ও তাকওয়া নির্ভর করে হৃদয় ও নিয়তের ওপর, বাহ্যিক আড়ম্বরের ওপর নয়।
মসজিদে নববী শুধুমাত্র নামাজের স্থান ছিল না; এটি ছিল নবীজীর (সা.) শিক্ষা, দাওয়াত, বিচার, শাসন, এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্র। এখানেই সাহাবায়ে কেরাম ইসলামী জ্ঞানে শিক্ষিত হতেন, এখান থেকেই ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের দূর-দূরান্তে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনের শেষ দশ বছর এই মসজিদের পাশেই কাটিয়েছেন। এখানেই তিনি ইবাদত করেছেন, সাহাবাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করেছেন এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখানেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে যেটি বর্তমানে রওজা মোবারক নামে বিশ্বমুসলিমের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
আজকের দিনে এই মসজিদ বিশ্ব মুসলিমদের জন্য একটি অনন্য তীর্থস্থান। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে বিস্তৃত মসজিদে নববী মুসলমানদের আত্মিক প্রশান্তির কেন্দ্রবিন্দু। এটি শুধু ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়; বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক মঞ্চ, যেখানে দাঁড়িয়ে একজন মুসলমান অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে এক গভীর সংযোগ অনুভব করে।
মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
“আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) একটি নামায হারাম মসজিদ ছাড়া অন্য যেকোনো মসজিদের চেয়ে উত্তম – এক হাজার নামাজের চেয়ে।”
(সহীহ বুখারী: ১১৯০, সহীহ মুসলিম: ১৩৯৪)
এই হাদীসের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, মসজিদে নববীতে এক রাকাত নামাজের মর্যাদা অন্য সব সাধারণ মসজিদের এক হাজার রাকাত নামাজের সমান। এটি এমন এক বিশাল ফজিলত যা আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসূল (সা.)-এর মসজিদকে দান করেছেন।
এছাড়াও, এই মসজিদে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি শুধু সওয়াবেই ধন্য হন না, বরং তার হৃদয়ে রাসূলের স্মরণ, সুন্নতের চর্চা এবং তাকওয়ার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। অনেক আলেম বলেন, এই ফজিলত শুধু ফরজ নামাজের জন্য নয়, বরং নফল, সুন্নত, কিয়ামুল লাইলসহ সব ধরণের ইবাদতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক কেবল একটি কবরস্থান নয়, বরং এটি মুসলমানদের হৃদয়ের সবচেয়ে পবিত্র স্থানগুলোর একটি। নবীজীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও অনুসরণের প্রতীক এই রওজা মোবারক।
রাসূল (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার কবর জিয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফাআতের অধিকার রয়েছে।”
(মুসনাদে বাযযার)
অন্যত্র তিনি বলেন:
“যে ব্যক্তি হজ সম্পন্ন করে আমার কবর জিয়ারত করে, সে যেন আমাকে জীবিত অবস্থায় জিয়ারত করল।”
(দারাকুতনি)
এই হাদীসগুলো স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কবর জিয়ারত করা একটি বরকতময় আমল। এটি শুধু আধ্যাত্মিক ঘনিষ্ঠতা অর্জনের উপায়ই নয়, বরং এর মাধ্যমে একজন মুসলমান রাসূলের শাফাআতের উপযুক্তও হতে পারেন যা কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বড় সফলতার মাধ্যম।
রওজা মোবারক জিয়ারতের মাধ্যমে একজন মুসলমান নবীজীর প্রতি তার ভালোবাসা ও ইমানী সম্পর্ককে দৃঢ় করে তোলে। এটি একটি উপলক্ষ নিজের গুনাহ মাফ চাওয়ার, রাসূলের সুন্নাহ অনুসরণের সংকল্প গ্রহণ করার এবং অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
“তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে বিশেষ সফর করা বৈধ নয় — মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ১১৮৯)
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইসলামে মসজিদে নববী জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা একটি অনুমোদিত ও ফজিলতপূর্ণ কাজ। তবে, মনে রাখতে হবে — সফরের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মসজিদে নববীতে ইবাদত করা, নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, এবং রাসূলের সুন্নাহর অনুসরণ। এটি কেবল কবর জিয়ারতের সফর নয়, বরং ইবাদতের মাধ্যমে আত্মার পবিত্রতা অর্জনের এক মহাসুযোগ।
মসজিদে নববীতে প্রবেশ করার সময় সুন্নত হলো ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা এবং একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করা, যেমন:
اللّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফতাহ্ লি আবওয়াবা রহমাতিক
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।”
এ দোয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ কামনা করেন, কারণ এ মসজিদে প্রবেশ করা মানেই রহমতের সীমাহীন দরজায় প্রবেশ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মোবারক জিয়ারতের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদব ও নিয়ম পালন করা জরুরি:
মসজিদে নববীর ভেতরে একটি বিশেষ অংশ রয়েছে, যা রাসূল (সা.) নিজে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন:
“আমার ঘর আর মিম্বরের মাঝের জায়গাটি জান্নাতের একটি টুকরো।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ১১৯৬)
এই স্থানটি রওয়াযা মুত্তাহারা নামে পরিচিত। মুসল্লিদের মধ্যে এই স্থানে নামাজ পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়, কারণ এই স্থান জান্নাতের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে এখানে নামাজ পড়ার সময় অন্যদের কষ্ট না দিয়ে ধৈর্য ও বিনয় নিয়ে সুযোগের অপেক্ষা করা উত্তম।
মসজিদে নববী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মোবারক একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান। এখানে জিয়ারতের সময় কিছু আদব ও শিষ্টাচার অবশ্যই পালনীয়, এবং কিছু কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে পরিহারযোগ্য — যা শরীয়ত পরিপন্থী ও বিদআতের শামিল। নিচে এমন কিছু কাজ তুলে ধরা হলো যেগুলো থেকে সতর্ক থাকা জরুরি:
অনেকেই রাসূল (সা.)-এর রওজার সামনে দাঁড়িয়ে কবরের দিকে মুখ করে হাত তুলে দোয়া করতে থাকেন বা কোনো কোনো সময় সিজদাহ করেন যা স্পষ্টতই শরীয়তের খেলাফ এবং বিদআত। ইসলাম কেবল আল্লাহর প্রতি সিজদাহ ও দোয়ার অনুমতি দেয়, কবরের সামনে এমন আচরণ শিরকের আশঙ্কাজনক সীমানায় চলে যেতে পারে। রাসূল (সা.) নিজেই বলেছেন:
“তোমরা কবরগুলোকে ঈদের মত (দেখার জায়গা) বানিয়ো না, আর আমার কবরকে পূজাস্থল করো না।”
(আবু দাউদ)
কিছু মানুষ রওজার সামনে থাকা জালি (মাশরাবিয়া)-তে কাপড় বা হাত ঘষে, বা চোখ-মুখ লাগিয়ে রাখে — মনে করে এর মাধ্যমে কোনো বরকত পাওয়া যাবে। এটি একটি সুস্পষ্ট বিদআত এবং সাহাবিদের আমলের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বরকত কেবল ইবাদত, সুন্নাহ ও তাকওয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়, বস্তু বা কাঠামোর মাধ্যমে নয়।
রওজা মোবারকে দাড়িয়ে অনেকেই উচ্চস্বরে কান্না করেন, দোয়া করেন বা জিকির করতে থাকেন। অথচ এটি রাসূলের সামনে শিষ্টাচারবিরুদ্ধ আচরণ। কুরআনে বলা হয়েছে:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের আওয়াজ নবীর আওয়াজের ওপর উচ্চ করো না...”
(সূরা হুজরাত: ২)
রওজার সামনে থাকা অবস্থায় উচিত নীরব, বিনয়ী ও আত্মমগ্ন থাকা, এবং মনে মনে সালাম ও দোয়া পাঠ করা।
আজকাল অনেকেই রওজার সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা বা ভিডিও ধারণ করে থাকেন এটি সম্পূর্ণরূপে ইবাদতের আদবের পরিপন্থী এবং আত্মপ্রদর্শনের একটি লাঞ্ছনাকর দৃষ্টান্ত। এই জায়গা আত্মপ্রদর্শনের নয়, বরং ইবাদত, বিনয়, ও আত্মশুদ্ধির স্থান। ছবি তোলার মাধ্যমে ইবাদতের আত্মা নষ্ট হয় এবং অন্য মুসল্লিদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।
সঠিক মনোভাব ও আদব বজায় রাখুন:
রওজা মোবারক জিয়ারতের সময় মূলত মনে রাখতে হবে যে, আমরা একজন নবীর সামনে দাড়িয়ে আছি যাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আনুগত্যই আমাদের ইমানের মূল ভিত্তি। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের আচরণ হতে হবে এমন যেন তিনি আমাদের দেখছেন। তাই আত্মপ্রচার, বিদআত ও মনগড়া ইবাদত পরিহার করে সহীহ নিয়মে বিনয় ও ইখলাসের সাথে জিয়ারত করাই প্রকৃত সুন্নাহ।
ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কেই ইবাদতের সুযোগ ও অধিকার দিয়েছে। নারীদের জন্য মসজিদে নববী জিয়ারত করাও বৈধ এবং ফজিলতপূর্ণ, তবে কিছু নিয়ম ও আদব মেনে চলা তাদের জন্য অপরিহার্য।
নারীরা মসজিদে নববীতে প্রবেশ করতে পারেন এবং রওজা মোবারক জিয়ারতের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন, তবে এর জন্য নির্ধারিত সময়সূচি ও নির্দিষ্ট প্রবেশপথ অনুসরণ করতে হয়। নারীদের জন্য আলাদা অংশে রওজার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম পাঠের সুযোগ দেওয়া হয়।
জিয়ারতের সময় নারীদের উচিত—
নারীদের রওজার সামনে দাঁড়িয়ে সালামের পদ্ধতি পুরুষদের মতোই:
السلام عليك يا رسول الله، السلام عليك يا نبي الله، السلام عليك يا خير خلق الله
এইভাবে, নারীরাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের সুযোগ লাভ করেন।
মিম্বর শরীফ হলো সেই স্থান, যেখান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের উম্মাহর উদ্দেশ্যে খুতবা দিতেন। এটি মসজিদে নববীর একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থান এবং রওয়াযা মুত্তাহারার ঠিক পাশে অবস্থিত। মিম্বর শরীফ ইসলামের ইতিহাসে নেতৃত্ব, দাওয়াত এবং শিক্ষা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
মসজিদে নববীর পার্শ্ববর্তী একটি পবিত্র কবরস্থান হলো জান্নাতুল বাকি। এখানে রয়েছে সাহাবায়ে কেরামের কবর, নবীজীর পরিবারের সম্মানিত সদস্যদের এবং ইসলামের প্রারম্ভিক যুগের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিশ্রামক্ষেত্র।
জান্নাতুল বাকি জিয়ারত করাও অত্যন্ত মুস্তাহাব ও ফজিলতপূর্ণ আমল, কারণ এতে ইসলামের প্রথম মহান ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের জীবন ও ত্যাগের স্মরণ করা হয়।
মসজিদে নববী এবং রাসূল (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের এক অগাধ আকাঙ্ক্ষা ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় সৌভাগ্যের প্রতীক। এটি কেবল একটি ইবাদতের মাধ্যম নয়, বরং নবীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের জীবন্ত প্রকাশ। এখানে এসে মুসলমানেরা তাদের আত্মাকে পবিত্র করে, নবীর আদর্শ অনুসরণের সংকল্প আরো দৃঢ় করে এবং আল্লাহর কাছে নিজেদের তওবা ও দোয়া জমা দেয়।
আমাদের উচিত, এই জিয়ারতকে কেবলমাত্র ভ্রমণ বা পর্যটনের উৎসব বানিয়ে না ফেলা, বরং এটি একটি গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণ করা; যেখানে নিজের মন ও হৃদয় নবীজীর সুন্নাহর আলোকে আলোকিত হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মসজিদে নববী জিয়ারতের মর্যাদা বুঝতে এবং সেখানে আদব, শিষ্টাচার ও সুন্নাহ মোতাবেক আচরণ করার তাওফিক দান করুন। যেন আমরা নবীজীর সান্নিধ্যে থেকে তার করুণাময় শাফাআতের অধিকারী হতে পারি।
আমিন।