ব্লগ

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, সঠিক নিয়ম-কানুন এবং ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সাথে সাথে বিভিন্ন পবিত্র স্থানের ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থানসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে এখানে।

Blog Details
বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ হজের প্রতিটি রুকনের জন্য দোয়া

 হজ, মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা, যা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুমিনের জীবনে একবার ফরজ।


হজের প্রতিটি রুকন বা ধাপে রয়েছে গভীর তাৎপর্য, ঐতিহাসিক পটভূমি এবং বিশেষ দোয়া, যা শুধু মুখে উচ্চারণ করাই যথেষ্ট নয়, বরং হৃদয়ে ধারণ করে তা অনুভব করাও অপরিহার্য।


এই দোয়াগুলো আমাদেরকে আল্লাহর সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত করে এবং নবীদের ত্যাগ, ধৈর্য ও ভক্তির স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।


চলুন, হজের প্রতিটি ধাপে পঠিত দোয়াগুলো আরবি, বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত, তাৎপর্য এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।

 

ইহরাম বাঁধার সময় দোয়া

আরবি:

 اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ حَجًّا، لَبَّيْكَ عُمْرَةً 

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান, লাব্বাইকা উমরাহ 

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে হজ ও উমরাহ পালন করতে এসেছি।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

ইহরাম হলো হজের প্রথম ধাপ, যা একটি বিশেষ পোশাকের চেয়েও বেশি, এটি একটি আধ্যাত্মিক ও মানসিক প্রস্তুতি। ইহরামের মাধ্যমে হাজী নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদতের জন্য উৎসর্গ করেন।


এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে একজন মুমিন ঘোষণা করেন যে, তিনি দুনিয়ার সব মোহ ত্যাগ করে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই পবিত্র যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। এই দোয়া হৃদয়ে শান্তি, নিষ্ঠা এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের অনুভূতি জাগায়।


হাদিসে এসেছে: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং কোনো অশ্লীল কাজ বা পাপাচারে লিপ্ত না হয়, সে তার মায়ের গর্ভ থেকে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।” (সহীহ বুখারী: ১৫২১)।


ইহরাম বাঁধার সময় এই দোয়া পড়া এই নিষ্পাপ অবস্থার প্রথম পদক্ষেপ। এটি হাজীকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তিনি এখন থেকে শুধু আল্লাহর হুকুম মেনে চলবেন।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

ইহরামের দোয়া আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর হজ পালনের সময় থেকে এসেছে। তিনি হজের উদ্দেশ্যে মক্কার মীকাতে পৌঁছে ইহরাম বাঁধার সময় এই দোয়া পড়েছিলেন।


এটি আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রতীক। ইহরামের মাধ্যমে হাজী দুনিয়ার সব পার্থিব পরিচয় ত্যাগ করে একটি সর্বজনীন মুসলিম পরিচয় গ্রহণ করেন, যেখানে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সবাই সমান। এই দোয়া হলো একটি প্রতিশ্রুতি, যে হাজী এখন থেকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করবেন এবং তাঁর ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন।

 

তালবিয়া পাঠ

আরবি:

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ

বাংলা উচ্চারণ: লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিআমাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারিকা লাক। 

অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামত এবং রাজত্ব শুধু তোমারই। তোমার কোনো অংশীদার নেই।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

তালবিয়া হলো হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলোর একটি, যা হজের প্রতিটি ধাপে বারবার উচ্চারিত হয়। এটি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও তাঁর একত্ববাদের ঘোষণা। তালবিয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী বারবার স্মরণ করেন যে, তিনি এই পবিত্র স্থানে এসেছেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। এই দোয়ার প্রতিটি শব্দ হৃদয়ে তাওহীদের প্রতি বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে এবং হাজীকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত রাখে।


হাদিসে এসেছে: জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখনই কোনো হাজী তালবিয়া পড়ে, তখন তার ডানে ও বামে থাকা প্রতিটি পাথর, গাছ এবং মাটির ঢিবি তার সঙ্গে তালবিয়া পড়ে, যতদূর তার কণ্ঠস্বর পৌঁছে।” (ইবনে মাজাহ: ২৯২৪)।


এই হাদিস তালবিয়ার ফজিলত ও এর আধ্যাত্মিক প্রভাবকে তুলে ধরে। তালবিয়া হাজীকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তিনি এখন আল্লাহর মেহমান এবং তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এই পবিত্র স্থানে উপস্থিত হয়েছেন।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

তালবিয়ার ইতিহাস হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সময় থেকে শুরু হয়। তিনি যখন কাবা শরীফ নির্মাণ সম্পন্ন করেন, তখন আল্লাহ তাঁকে মানুষকে হজের জন্য ডাকতে বলেছিলেন। তালবিয়া হলো সেই ডাকের সাড়া।


হযরত ইব্রাহিম (আ.) উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে মানুষকে হজের জন্য আহ্বান করেছিলেন, আর তালবিয়া হলো সেই আহ্বানের প্রতিধ্বনি। প্রিয় নবী (সা.) হজের সময় এই দোয়াটি বারবার পড়তেন এবং সাহাবীদেরও তা শিখিয়েছিলেন। তালবিয়া হজের প্রতিটি নতুন কাজ শুরুর আগে পড়া হয়, যা হাজীকে তাঁর উদ্দেশ্যের প্রতি একাগ্র রাখে।

 

কাবা শরীফ দর্শনের সময় দোয়া

আরবি:

اللَّهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيفًا وَتَعْظِيمًا وَمَهَابَةً وَبِرًّا

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা যিদ হাযাল বাইতা তাশরীফান, ওয়া তাআযিমান, ওয়া মাহাবাতান, ওয়া বিররান 

অর্থ: হে আল্লাহ! এই ঘরকে আরও সম্মান, মর্যাদা, ভয় ও কল্যাণ দান করুন।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

কাবা শরীফ মুসলিমদের কিবলা এবং আল্লাহর পবিত্র ঘর। এটি প্রথম দর্শনের মুহূর্ত হৃদয়ে এক অপার্থিব অনুভূতি জাগায়। এই দোয়া পড়া মুস্তাহাব, কারণ এটি কাবার মর্যাদা ও গুরুত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।


হাদিসে এসেছে, কাবা দর্শনের সময় দোয়া কবুল হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কাবা শরীফের দিকে তাকানো একটি ইবাদত।” (মুসনাদ আহমাদ)।


এই মুহূর্তে হাজী নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং পুরো উম্মাহর জন্য দোয়া করেন। এই দোয়া কাবার প্রতি ভালোবাসা ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।


এই দোয়া পড়ার সময় হাজী কাবার ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অনুভব করেন। কাবা শুধু একটি ভবন নয়, বরং এটি আল্লাহর একত্ববাদের প্রতীক এবং মুসলিম ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। এই দোয়া হৃদয়ে কাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি জাগায়।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

কাবা শরীফ হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কর্তৃক নির্মিত। এটি আল্লাহর প্রথম ঘর, যা মানুষের ইবাদতের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কুরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই মানুষের জন্য প্রথম ঘর যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা মক্কায়, যা বরকতময় এবং সারা বিশ্বের জন্য হিদায়াত।” (সূরা আল-ইমরান: ৯৬)।


প্রিয় নবী (সা.) কাবা দর্শনের সময় এই দোয়া পড়তেন এবং সাহাবীদেরও তা শিখিয়েছিলেন। এই দোয়া কাবার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা এবং এর দর্শনের মাধ্যমে হৃদয়ে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা জাগানোর একটি মাধ্যম।


তাওয়াফের সময় দোয়া

আরবি:

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

বাংলা উচ্চারণ: রাব্বানা আ-তিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আ-যাবান-নার। 

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

তাওয়াফ হলো কাবা শরীফের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করা, যা হজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুকন। তাওয়াফের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে এই দোয়াটি পড়া অত্যন্ত উত্তম। এই দোয়া দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য একটি পরিপূর্ণ প্রার্থনা। এটি প্রিয় নবী (সা.) এর প্রিয় দোয়াগুলোর একটি ছিল।


হাদিসে এসেছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়শই এই দোয়া পড়তেন। (সহীহ বুখারী: ৬৩৮৯)।


তাওয়াফের সময় এই দোয়া পড়া হাজীকে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার শিক্ষা দেয়। এটি একটি সর্বজনীন দোয়া, যা শুধু ব্যক্তিগত কল্যাণ নয়, বরং পুরো উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে। তাওয়াফের প্রতিটি চক্রে এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত এবং জান্নাতের প্রার্থনা করেন।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

তাওয়াফের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অত্যন্ত গভীর। কাবা শরীফ নির্মাণের পর থেকেই তাওয়াফ হলো আল্লাহর ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.) কাবা নির্মাণের পর তাওয়াফ করেছিলেন।


প্রিয় নবী (সা.) বিদায় হজের সময় তাওয়াফের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং সাহাবীদের তাওয়াফের সময় এই দোয়া পড়তে উৎসাহিত করেছেন। তাওয়াফ হলো আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম, আর এই দোয়া তাওয়াফের আধ্যাত্মিক গভীরতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।


সাঈ (সাফা ও মারওয়ার মাঝে দৌড়ানো) সময় দোয়া

আরবি:

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: ইন্নাস-সাফা ওয়াল-মারওয়াতা মিন শাআ-ইরিল্লাহ 

অর্থ: নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নির্ধারিত নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভুক্ত।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

সাঈ হলো হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন, যেখানে হাজী সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌড়ান। এই দোয়া দিয়ে সাঈ শুরু হয়। এটি কুরআনের একটি আয়াত (সূরা বাকারা: ১৫৮), যা সাফা ও মারওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।


এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী স্মরণ করেন যে, সাঈ হলো হযরত হাজেরা (আ.) এর ত্যাগ ও বিশ্বাসের প্রতীক। এটি হাজীকে ধৈর্য, বিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি ভরসার শিক্ষা দেয়।


হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈকে হজ ও উমরাহর অংশ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।” (সহীহ মুসলিম: ১২১১)। এই দোয়া পড়া সাঈয়ের আধ্যাত্মিক গুরুত্বকে আরও গভীর করে এবং হাজীকে হযরত হাজেরা (আ.) এর সংগ্রাম ও ত্যাগের সঙ্গে সংযুক্ত করে।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

সাঈয়ের ইতিহাস হযরত হাজেরা (আ.) এর সঙ্গে জড়িত। তিনি তাঁর শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) এর জন্য পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়েছিলেন। তাঁর এই ত্যাগ ও বিশ্বাসের ফলে আল্লাহ জমজমের কূপ উৎসারিত করেন। সাঈ হলো সেই ঘটনার স্মরণ।


হযরত হাজেরা (আ.) এর ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা হাজীদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং আল্লাহর প্রতি তাদের নিজস্ব বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেন।

 

আরাফার ময়দানে দোয়া

আরবি:

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই-ইন কদির। 

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁর, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

আরাফার ময়দান হলো হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দিনে দোয়া করা হজের প্রাণ।


হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “হজ হলো আরাফা।” (তিরমিযী: ৮৮৯)।


আরাফার দিনে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সবচেয়ে কাছে থাকেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। এই দোয়া আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর সর্বশক্তিমানতা এবং তাঁর প্রতি পূর্ণ প্রশংসার প্রকাশ। এটি হাজীকে তাঁর ঈমান নবায়ন করতে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করে।


আরাফার দিনে হাজীরা সারাদিন জিকির, দোয়া ও তওবায় মগ্ন থাকেন। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে তারা তাওহীদের প্রতি তাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেন এবং আল্লাহর রহমতের প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখেন। এই দোয়া হৃদয়ে গভীর শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্যের অনুভূতি জাগায়।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

আরাফার ময়দানে প্রিয় নবী (সা.) তাঁর বিদায় হজের সময় ঐতিহাসিক খুৎবা প্রদান করেছিলেন, যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও মানবাধিকারের একটি অমর দলিল। এই দিনে হাজীরা আল্লাহর কাছে তাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাঁর রহমত কামনা করেন।


আরাফার ময়দান হলো সেই স্থান, যেখানে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে প্রথম সাক্ষাত করেছিলেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে সংযুক্ত হন এবং আল্লাহর কাছে তাদের নিজস্ব ক্ষমা প্রার্থনা করেন।


মুযদালিফায় রাত কাটানোর সময় দোয়া

আরবি:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ، وَالنَّجَاحَ فِيهَا

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরা হাযিহিল লাইলাহ, ওয়ান-নাজাহা ফিহা 

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি এই রাতের কল্যাণ ও এর সফলতা প্রার্থনা করছি।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

মুযদালিফার রাত হলো হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে হাজীরা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান। এই রাত ধৈর্য, ইবাদত ও তওবার রাত। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী এই রাতের পূর্ণ বরকত ও সফলতা প্রার্থনা করেন।


হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুযদালিফায় রাত কাটায় এবং সেখানে ইবাদত করে, তার জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।” (ইবনে মাজাহ: ৩০১৫)।


এই দোয়া হাজীকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মুযদালিফার রাত শুধু একটি আচার নয়, বরং আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার একটি সুযোগ। এটি হৃদয়ে ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার অনুভূতি জাগায়।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

মুযদালিফায় রাত কাটানো আরাফার পরের ধাপ। এখানে হাজীরা জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য কংকর সংগ্রহ করেন। প্রিয় নবী (সা.) বিদায় হজের সময় মুযদালিফায় রাত কাটিয়েছেন এবং সেখানে ফজরের নামাজ পড়েছেন।


এই রাতটি হাজীদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক পুনর্জননের সময়, যেখানে তারা আল্লাহর কাছে তাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই দোয়া পড়া মুযদালিফার রাতের গুরুত্ব ও বরকতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি মাধ্যম।

 

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় দোয়া

আরবি:

بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُ أَكْبَرُ، رَغْمًا لِلشَّيْطَانِ وَحِزْبِهِ

বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, রাগমাল্লিশ শাইতানি ওয়া হিজবিহি 

অর্থ: আল্লাহর নামে, আল্লাহ মহান। শয়তান ও তার অনুসারীদের ধ্বংস হোক।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা হলো হজের একটি প্রতীকী আমল। এটি শুধু পাথর ছোঁড়া নয়, বরং শয়তানের প্রলোভন ও মন্দ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার অঙ্গীকার। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী তাঁর ঈমানকে শক্তিশালী করেন এবং শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা নবায়ন করেন। হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় এই দোয়া পড়তেন। (মুসনাদ আহমাদ)।


এই দোয়া হাজীকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষিত থাকার শিক্ষা দেয়। এটি হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা ও শয়তানের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার অনুভূতি জাগায়।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

এই আমলের ইতিহাস হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সঙ্গে জড়িত। যখন তিনি তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করতে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান তাঁকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তখন শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে তাড়িয়েছিলেন।


এই ঘটনার স্মরণে হাজীরা জামারায় পাথর নিক্ষেপ করেন। এই দোয়া পড়া হয় শয়তানের বিরুদ্ধে দৃঢ়তা প্রকাশ এবং হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ত্যাগ ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

 

কুরবানির সময় দোয়া

আরবি:

اللَّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাযা মিনকা ওয়ালাকা 

অর্থ: হে আল্লাহ! এটি তোমার পক্ষ থেকে এবং তোমারই জন্য।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

কুরবানি হলো হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু উৎসর্গ করার মাধ্যমে পালন করা হয়। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী প্রকাশ করেন যে, এই কুরবানি শুধু আল্লাহর জন্য। এটি ত্যাগ, আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের প্রতীক।


হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কুরবানির দিনে আল্লাহর কাছে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কুরবানি।” (তিরমিযী: ১৪৯৩)।


এই দোয়া হাজীকে শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহর পথে সবকিছু উৎসর্গ করতে হবে। এটি হৃদয়ে ত্যাগের মনোভাব ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি জাগায়।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

কুরবানির ইতিহাস হযরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) এর অপূর্ব ত্যাগের সঙ্গে জড়িত। আল্লাহর হুকুমে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে কুরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, আর হযরত ইসমাইল (আ.) তাতে সম্মতি দিয়েছিলেন।


আল্লাহ তাঁদের এই ত্যাগের প্রশংসা করেন এবং ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি পশু কুরবানির ব্যবস্থা করেন। এই দোয়া পড়া হয় সেই ত্যাগের স্মরণে এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশের জন্য।

 

তাওয়াফে বিদা (বিদায়ী তাওয়াফ) এর সময় দোয়া

আরবি:

اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ هَذَا آخِرَ الْعَهْدِ بِبَيْتِكَ الْحَرَامِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাজআল হাযা আখিরাল আহদি বিবাইতিকাল হারাম 

অর্থ: হে আল্লাহ! এটিকে আপনার পবিত্র ঘরের সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎ করবেন না।

 

ফজিলত ও তাৎপর্য:

তাওয়াফে বিদা হলো হজের শেষ ধাপ, যখন হাজী কাবা শরীফকে বিদায় জানান। এই মুহূর্তে হাজীর হৃদয় ভারী হয়ে ওঠে, কারণ তিনি আল্লাহর ঘর থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যেন এটি তাঁর শেষ সফর না হয়। এটি হৃদয়ে গভীর আকাঙ্ক্ষা জাগায়, যেন আবার কাবায় ফিরে আসা সম্ভব হয়।


হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তাওয়াফে বিদা হলো হজের শেষ আমল।” (সহীহ মুসলিম: ১৩২৮)।


এই দোয়া কাবার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আল্লাহর ঘরের সঙ্গে চিরন্তন সম্পর্কের প্রকাশ। এটি হাজীকে শিক্ষা দেয় যে, হজ শুধু একটি আচার নয়, বরং এটি আল্লাহর সঙ্গে একটি আধ্যাত্মিক বন্ধন।


ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:

প্রিয় নবী (সা.) বিদায় হজের সময় তাওয়াফে বিদা করেছেন এবং সাহাবীদের এই দোয়া পড়তে উৎসাহিত করেছেন। তাওয়াফে বিদা হলো কাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশ। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে হাজী কাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে আরও গভীর করেন এবং আল্লাহর কাছে পুনরায় ফিরে আসার প্রার্থনা করেন।


নিচে হজের প্রতিটি রুকনের দোয়া সংক্রান্ত ১০টি সাধারন প্রশ্ন (FAQ) এবং তাদের উত্তর দেওয়া হলো।

 

প্রশ্ন: ইহরাম বাঁধার সময় দোয়া পড়া কি ফরজ?

উত্তর: ইহরাম বাঁধার সময় দোয়া পড়া ফরজ নয়, তবে এটি সুন্নাহ এবং অত্যন্ত উত্তম আমল। দোয়াটি হলো: “আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান, লাব্বাইকা উমরাহ”। এটি পড়ার মাধ্যমে হাজী আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার অঙ্গীকার প্রকাশ করেন। এই দোয়া ইহরামের আধ্যাত্মিক গুরুত্বকে আরও গভীর করে।

 

প্রশ্ন: তালবিয়া কতবার এবং কখন পড়তে হয়?

উত্তর: তালবিয়া (“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...”) ইহরাম বাঁধার পর থেকে হজের বিভিন্ন ধাপে বারবার পড়া মুস্তাহাব। এটি বিশেষ করে প্রতিটি নতুন কাজ শুরুর আগে, স্থান পরিবর্তনের সময়, বা উঁচু-নিচু জায়গায় উঠা-নামার সময় পড়া উত্তম। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তালবিয়া বেশি বেশি পড়তেন (ইবনে মাজাহ: ২৯২৪)। তবে এটি কুরবানি বা জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর বন্ধ করা হয়।

 

প্রশ্ন: কাবা শরীফ দর্শনের সময় দোয়া না পড়লে কি হজ অপূর্ণ থাকে?

উত্তর: কাবা শরীফ দর্শনের সময় দোয়া পড়া মুস্তাহাব, কিন্তু এটি হজের ফরজ বা ওয়াজিব আমল নয়। দোয়াটি হলো: “আল্লাহুম্মা যিদ হাযাল বাইতা তাশরীফান...”। এটি না পড়লেও হজ পূর্ণ হয়। তবে এই দোয়া পড়া কাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের একটি বিশেষ মাধ্যম এবং এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 

প্রশ্ন: তাওয়াফের সময় নির্দিষ্ট কোনো দোয়া পড়তে হয়?

উত্তর: তাওয়াফের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দোয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে “রাব্বানা আ-তিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাহ...” পড়া অত্যন্ত উত্তম, কারণ এটি প্রিয় নবী (সা.) এর প্রিয় দোয়া ছিল (সহীহ বুখারী: ৬৩৮৯)। হাজী তাওয়াফের সময় নিজের পছন্দের যেকোনো দোয়া, জিকির বা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন। তাওয়াফের সময় হৃদয় থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করা উচিত।

 

প্রশ্ন: সাঈয়ের সময় শুধু প্রদত্ত দোয়া পড়তে হয়, নাকি অন্য দোয়াও পড়া যায়?

উত্তর: সাঈ শুরুর সময় “ইন্নাস-সাফা ওয়াল-মারওয়াতা মিন শাআ-ইরিল্লাহ” পড়া মুস্তাহাব, কারণ এটি কুরআনের আয়াত (সূরা বাকারা: ১৫৮)। তবে সাঈয়ের সময় হাজী নিজের পছন্দের যেকোনো দোয়া, জিকির বা তাওবা পড়তে পারেন। হযরত হাজেরা (আ.) এর ত্যাগের কথা স্মরণ করে এ সময় আল্লাহর কাছে ধৈর্য ও বিশ্বাসের জন্য দোয়া করা উত্তম।

 

প্রশ্ন: আরাফার ময়দানে দোয়া পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময় কোনটি?

উত্তর: আরাফার দিনে দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া পড়ার সবচেয়ে উত্তম সময়। এই সময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাছাকাছি থাকেন এবং দোয়া কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আরাফার দিনের সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ...” (তিরমিযী: ৩৫৮৫)। তবে পুরো দিন জুড়ে জিকির, তাওবা ও দোয়ায় মগ্ন থাকা উচিত।

 

প্রশ্ন: মুযদালিফায় রাত কাটানোর সময় দোয়া পড়া কি বাধ্যতামূলক?

উত্তর: মুযদালিফায় রাত কাটানোর সময় দোয়া পড়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি মুস্তাহাব। দোয়াটি হলো: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরা হাযিহিল লাইলাহ...”। এই দোয়া পড়া রাতের বরকত ও সফলতা লাভের জন্য উত্তম। মুযদালিফায় হাজীদের জিকির, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনায় সময় কাটানো উচিত, কারণ এটি ইবাদতের বিশেষ সময়।

 

প্রশ্ন: শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় দোয়া ভুলে গেলে কী করব?

উত্তর: শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় দোয়া (“বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার...”) পড়া সুন্নাহ, কিন্তু এটি ফরজ নয়। ভুলে গেলে শুধু “আল্লাহু আকবার” বলে পাথর নিক্ষেপ করলেও হজের আমল পূর্ণ হবে। তবে দোয়াটি পড়া শয়তানের বিরুদ্ধে দৃঢ়তা প্রকাশ ও হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর স্মরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে মনে পড়লে দোয়াটি পড়ে নেওয়া যায়।

 

প্রশ্ন: কুরবানির সময় দোয়া ছাড়া কুরবানি করলে কি তা কবুল হবে?

উত্তর: কুরবানির সময় দোয়া (“আল্লাহুম্মা হাযা মিনকা ওয়ালাকা”) পড়া মুস্তাহাব, কিন্তু এটি কুরবানির জন্য বাধ্যতামূলক নয়। নিয়ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করলে তা কবুল হবে, ইনশাআল্লাহ। তবে দোয়াটি পড়া কুরবানির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বাড়ায় এবং হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ত্যাগের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

 

প্রশ্ন: তাওয়াফে বিদার দোয়া না পড়লে কি হজ অপূর্ণ থাকবে?

উত্তর: তাওয়াফে বিদার দোয়া (“আল্লাহুম্মা লা তাজআল হাযা আখিরাল আহদি...”) পড়া মুস্তাহাব, কিন্তু এটি হজের ফরজ বা ওয়াজিব আমল নয়। এই দোয়া না পড়লেও হজ পূর্ণ হয়। তবে এই দোয়া পড়া কাবার প্রতি ভালোবাসা ও পুনরায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের একটি হৃদয়স্পর্শী মাধ্যম। এটি হাজীর বিদায় মুহূর্তকে আরও অর্থপূর্ণ করে।

  

হজ একটি পবিত্র যাত্রা, যা আমাদেরকে ত্যাগ, ধৈর্য, ভালোবাসা এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়। প্রতিটি রুকনের পেছনে রয়েছে গভীর ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। এই দোয়াগুলো শুধু মুখে উচ্চারণ করলেই যথেষ্ট নয়, বরং এগুলোর মর্ম হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। এই দোয়াগুলো আমাদেরকে হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত হাজেরা (আ.), হযরত ইসমাইল (আ.) এবং প্রিয় নবী (সা.) এর ত্যাগ ও ভক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।


আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ পালনের তাওফিক দান করুন। তাঁর পছন্দনীয় এই দোয়াগুলোর মাধ্যমে আমাদের গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমাদের হৃদয়কে তাঁর ভালোবাসায় পূর্ণ করে দিন,আমিন।



Share
Comments
কমেন্ট করতে লগইন করুন। লগইন | রেজিস্ট্রেশন

No Data Found